প্রকাশিত: ০৬/০৩/২০১৭ ৭:১৬ পিএম , আপডেট: ০৬/০৩/২০১৭ ৭:১৯ পিএম

“আপা” এবং “মাল” বিতর্ক নিয়ে আমার কিছু কথা। একান্তই ব্যক্তিগত অভিমত!
বিষয়টি নিয়ে কোন কথা বলার ইচ্ছাই আমার ছিলনা। কিন্তু ঘটনার পর থেকে দুই পক্ষের কাঁদা ছুড়াছুড়ি এবং এক পক্ষ ঘটনাটিকে জায়েজ করতে ঘটনার সাথে যেভাবে রঙ ঢং মিশিয়ে পাবলিকের কাছে উপস্থাপন করছেন তার জন্য আমার স্বল্প জ্ঞান থেকে কিছু কথা না বলে পারছিনা।

ঘটনার পর থেকে একটি বিষয় ভাবছি, যার বাবা মুমুর্ষু অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি, যেখানে ওয়ার্ডে দুই হাত ব্যবধানে রোগী আর তার স্বজনদের ভীড়ে জনাকীর্ণ সেখানে কিভাবে ইভটিজিং হতে পারে আমার মাথায় আসছেনা। যাই হোক, যে রোগীর ছেলেকে কেন্দ্র করে এই ঘটনা সেই রোগী কিন্তু ধর্মঘট চলাকালেই মারা গেছে। আবার কেউ ভাববেন না তিনি বিনা চিকিতসাতেই মারা গেছেন।

কিন্তু মারা যাওয়ার আগে হয়তো তিনি তার চোখের সামনে থেকে কতিপয় সাদা পোশাকের স্মার্ট, ভদ্র, শিক্ষিত ব্যক্তি কতৃক তার ছেলেকে টেনে হেচড়ে নিয়ে যেতে দেখেছেন। তারপরের ঘটনা মারধর এবং কানধরে উঠবস করানোর দৃশ্য না দেখলেও শুনেছেন অথবা ভিডিওতে দেখেছেন। সেই মুমুর্ষু রোগীর জ্ঞান থাকলে এই বিষয়গুলো তার নলেজে যাওয়ার কথা।

কারণ এই ঘটনাটি নিয়ে তখন শুধু সেই হাসপাতাল নয় পুরো দেশ সরগরম। বিষয়টি আলোচিত এবং অনাকাংখিত হওয়ায় অবশ্যই সেই রোগীর আশেপাশের বেডের লোকজন সেই রুমে অবশ্যই বিষয়টি নিয়ে আলোচনা বা কানাঘুষা করেছেন অথবা সেই রোগীর আত্মীয় স্বজনেরা রোগীর আশেপাশে বসে শলাপরামর্শ করেছেন। বিপদের সময় আসলে কারোরই মাথা ঠিক থাকেনা। এরকমটি হওয়া অস্বাভাবিক কিছু না !!

যাই হোক, বিষয়টি পুলিশ পর্যন্ত গড়ায় এবং এরকম একজন রোগী মুমুর্ষু অবস্থায় থাকা সত্বেও তার ছেলেকে মারধর এবং কানধরে উঠবস করানোর পরেও তাদের খায়েস না পূর্ণ হওয়ায় তাকে তুলে দেওয়া হয় পুলিশের হাতে। বাহ! কি চমৎকার মানবিকতা!!!

মারধর এবং কান ধরে উঠবস করানোর বিষয়টি অবশ্যই আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার চাক্ষুষ সাক্ষ্য প্রমাণ (ভিডিও চিত্র এবং প্রত্যক্ষ্যদর্শী) থাকলেও সেটা তাদের জন্য দোষের কিছু না।কারণ তারা উচ্চ বংশীয়। এখানে কেউ অপরাধ করলে প্রচলিত আইন অনুযায়ী তার বিরুদ্ধে অভিযোগ করতে পারতেন। কিন্তু তা না করে তাহারা কার পক্ষে কিসের সাফাই গাইছেন ?

একটা মানবিক পেশার সদস্য হয়ে যার মধ্যে নুন্যতম ধৈর্য্য শক্তি নেই, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ নেই, যারা আইন নিজের হাতে তুলে নিতে একটুও কার্পণ্য করেন না, যারা একজন মুমূর্ষু রোগীর কথা একবারো চিন্তা না করে তার ছেলেকে নির্দয় ভাবে পেটাতে পারে, কানে ধরে উঠবস করাতে পারে, রোগীদের জিম্মি করে ধর্মঘটে যেতে পারে আমি কোনভাবেই তাদের সমর্থন করতে পারিনা।

আমি কোনভাবেই কোন অপরাধকে প্রশ্রয় দেওয়ার কথা বলছিনা। বলছি মানবিক হতে। আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে।

পেশাগত দায়িত্বপালনকালে আশেপাশের অনেক মানুষের শালা, চুদিরভাই, ঘুষখোর সহ নানা অশালীন কথাবার্তা কানে ভেসে আসে। সেদিন এক সাংবাদিক বন্ধুর পোষ্টে দেখলাম, কর্মবিরতী চলাকালে কোন এক জায়গায় সেখানে উপস্থিত এক শিক্ষানবিশ ডাক্তারের সাক্ষাৎকার নিতে গেলে পাশ থেকে একজন নাকি কথা প্রসঙ্গে উত্তেজিত হয়ে বলে উঠেন, “বুম (মাইক্রোফোন) তোর গোয়ার মধ্য দিয়া ঠুকাইয়া দিমু” ।

তাই বলে কি তিনি তার সহকর্মীদের ডেকে এনে তাকে টেনে হেছড়ে মারধর করা শুরু করবেন? নাকি কানধরে উঠবস করাবেন?

পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশের (তারপর সাংবাদিক) চেয়ে আর কোন পেশার কেউ এতোটা হয়রানীর শিকার হয় কি না আমার জানা নেই। বাট, আফসোস আমরা কর্মবিরতির কথা চিন্তাও করতে পারিনা। আমাদের উপর গৃহীত সকল সিদ্ধান্ত আমরা মাথা পেতে নেই। আইনগত প্রক্রিয়ায় তা সমাধান করার চেষ্টা করি।

আইন যেহেতু সবার জন্য সমান। তাই এই পথে না হেটে মানুষকে জিম্মি করে নিজের স্বার্থ উদ্ধার কতটা মানবিক প্রশ্ন রইল বিবেকের কাছে?

আর আমার ছোট্ট জীবনে কয়েকটি হাসপাতালে গিয়ে যে নেগেটিভ ধারণা নিয়ে এসেছি এবং বাজে ব্যবহার পেয়েছি তার বর্ণনা দিতে চাচ্ছিনা। তবে বাধ্য হলে কোন একদিন অবশ্যই দিব। আমার মনে হয় দেশের প্রতি ১০ জনের মধ্যে একজন নাগরিক কোন না কোন পর্যায়ে ডাক্তারের দুর্ব্যহার অথবা তাচ্ছিল্যের শিকার হয়েছেন। যার বেশীরভাগই সরকারী।

আর একটি কথা না বললেই নয়। উক্ত ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটি বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যায়। প্রথমে তারা সেদিন উপস্থিতি সাংবাদিকদের কাছ থেকে ঘটনার বর্ণনা শোনেন।

পরে হাসপাতালে পরিচালক এ কে এম মাসুদ আহসান, প্রশাসনিক কর্মকর্তা, জ্যেষ্ঠ চিকিৎসক, মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম আহসান হাবিব, উপাধ্যক্ষ রেজাউল করিম জুয়েল, চিকিৎসকদের সংগঠন বিএমএ নেতা, পুলিশ কর্মকর্তা ও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের আলাদাভাবে প্রত্যেকের বক্তব্য নেন।

যে স্থানে ঘটনা ঘটেছিল সেখানের এবং আশপাশের রোগীদের নিকট থেকেও বিস্তারিত শোনেন তারা।

এই তদন্ত শেষে বুধবার সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয় তদন্ত কমিটি।

ওই প্রতিবেদনে বিস্তারিত কী বলা হয়েছে তা প্রকাশ না করা হলেও একটি লাইন প্রকাশ করা হয়েছে। এতে শিক্ষানবিশ চিকিৎসকদের আচরণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, ‘গর্হিত কাজ বলে প্রতীয়মান হয়েছে।’

 

ফেইসবুক থেকে সংগৃহীত

পাঠকের মতামত

কক্সবাজার জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্প থেকে ৪৪০৯ জনের নাম বাতিল

কক্সবাজারে জলবায়ু উদ্বাস্তু পুনর্বাসন প্রকল্পে (খুরুশকুল) পুনর্বাসনের চার হাজার ৪০৯ জনের তালিকা বাতিল করা হয়েছে। ...

জনগণ সচেতন হলে মব-চাঁদাবাজি বন্ধ হবে: কক্সবাজারে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেছেন, ‘জনগণ সচেতন হলে মব ভায়োলেন্স ...

আজ ১২ ঘন্টার সফরে কক্সবাজারে আসছেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বরাষ্ট্র ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মোঃ জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) ...